ঢাকা ০৫:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এইমাত্র পাওয়াঃ
Logo গলাচিপায় মিথ্যে ধর্ষণ চেষ্টা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন  Logo চেয়ারম্যান হতে মরিয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ মেম্বার সাঈদ! Logo গলাচিপায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত Logo কোড়ালিয়া স্পীড বোট ঘাটে চাঁদার দাবিতে হামলা আহত ৩ Logo দুই শিশু নিখোঁজ, পাচারের অভিযোগে যুবক আটক Logo শাহজাদপুরে সাব্বির হত্যা মামলায় ৭ জনের যাবজ্জীবনসহ ১৫ জনের কারাদণ্ড Logo গলাচিপায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি,প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট Logo আমতলীতে মিথ্যে ও ভিত্তিহীন বানোয়াট সংবাদ প্রকাশে নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন Logo গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান সবুজ শারীরিকভাবে অসুস্থ — সুস্থতার জন্য দোয়ার আহ্বান Logo সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনসহ পুলিশের ১৮ কর্মকর্তা বরখাস্ত
কাগজের ডাক:
Logo গলাচিপায় মিথ্যে ধর্ষণ চেষ্টা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন  Logo চেয়ারম্যান হতে মরিয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ মেম্বার সাঈদ! Logo গলাচিপায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত Logo কোড়ালিয়া স্পীড বোট ঘাটে চাঁদার দাবিতে হামলা আহত ৩ Logo দুই শিশু নিখোঁজ, পাচারের অভিযোগে যুবক আটক Logo শাহজাদপুরে সাব্বির হত্যা মামলায় ৭ জনের যাবজ্জীবনসহ ১৫ জনের কারাদণ্ড Logo গলাচিপায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি,প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট Logo আমতলীতে মিথ্যে ও ভিত্তিহীন বানোয়াট সংবাদ প্রকাশে নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন Logo গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান সবুজ শারীরিকভাবে অসুস্থ — সুস্থতার জন্য দোয়ার আহ্বান Logo সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনসহ পুলিশের ১৮ কর্মকর্তা বরখাস্ত

সাঈদীর মৃত্যুতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবির সংঘর্ষ

  • আপডেট সময় : ১২:৩১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩
  • ৪৯০ বার পড়া হয়েছে

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তান্ডব চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মিন্টু রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। যদিও রাতভর অবরোধ থাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে সাঈদীর সমর্থকদের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল, এবং ফাঁকা গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করতে হয়েছে। পরে পুলিশি পাহাড়ায় সাঈদীর মরদেহ পাঠানো হয় পিরোজপুরে। এদিকে চকরিয়ায় গায়েবানা জানাজা ঘিরে সংঘর্ষ, গুলিতে এক জন নিহত।

গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহুূর্তে সাঈদী সমর্থক ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা হাসপাতালের সামনে জড়ো হতে থাকে। এ সময় তারা সাঈদীকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। রাত যত গভীর হতে থাকে ততোই শাহবাগে জামায়াত নেতাকর্মীদের ভীড় বাড়তে থাকে। কয়েক দফা চেষ্টা করেও পুলিশ সাঈদী সমর্থকদের হাসপাতালের সামনে থেকে সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। ভোর পর্যন্ত জামায়াত-শিবির কর্মীসহ সাঈদী সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিলের কারণে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল ও আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়। রাতভর এসব কারণে সাঈদীর লাশ হাসপাতাল থেকে বের করা যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে ভোরে সাঈদীর লাশ শীতাতক নিয়ন্ত্রিত এম্বুলেন্সে বের করা হলে শাহাবাগ মোড়ে সাঈদীর মরদেহ রেখে জানাজার নামাজের আয়োজন করার চেষ্টা করে জামায়াত-শিবির ও সাঈদীর সমর্থকরা। ওই সময় সাঈদীর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল ও এম্বুলেন্সে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ারসেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

সাঈদীর মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হার্ট অ্যাটাকজনিত কারণে মারা যান। সারারাত তার মরদেহ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও তার স্বজনরা নাটক করেছে এবং তান্ডব চালিয়েছে।

তিনি মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তার দুই ছেলেকে জানায়। পরে তার দুই ছেলে মরদেহ পিরোজপুর নেয়ার জন্য কারাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। এর মধ্যে জেল কর্তৃপক্ষ মরদেহের ময়নাতদন্ত করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। সেই অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে আসা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট এসে মরদেহের সুরতহাল সম্পন্ন করেন। যখন ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হবে সেই মুহূর্তে তার ছেলেরা জোর দাবি জানায়, তারা ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নিতে চায়। এ বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। পরে রাত একটা কি দেড়টার দিকে তারা জেল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায় বলেন ডিএমপি কমিশনার।

কমিশনারের ভাষ্য, এরপর মরদেহের গোসল শেষে পরিবার প্রস্তুতি নেয় পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়ার। তখন বিএসএমএমইউ ও শাহবাগে আগে থেকে অবস্থান নেয়া কয়েক হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী দাবি তুলে জানাজা পড়ে মরদেহ নেয়ার। তখন আমরা তাদের বলি আপনারা এখানে জানাজা পড়তে পারেন। আমরা তাদের বলি জাতীয় শোক দিবস আমাদের ব্যস্ততা আছে, আপনারা এখন জানাজা পড়ে মরদেহ নিয়ে যেতে পারেন। রাত সোয়া ২টার দিকে তারা জানাজার পরিবর্তে মোনাজাত করে আধা ঘণ্টা। তারা বলে আমরা জানাজা পড়ব না মোনাজাত করেছি, পরে আমরা গায়েবানা জানাজা পড়ব। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা মোনাজাত করে।

 

 

কিন্তু যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে। তারা কোনভাবে মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এ সময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় তারা গাড়ি ভাঙচুরও শুরু করে। এই হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হয়। তারা পুলিশের ৪-৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা ধৈর্য সহকারে এই তান্ডব সহ্য করি যে, তারা একটা মরদেহ নিয়ে যেতে চাইছে সেটা নিয়ে যাক। তারপরেও আমরা কোন শক্তি প্রয়োগ করিনি।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ফজরের নামাজের পরে তাদের আবারও অনুমতি দেয়া হলো জানাজা পড়ার। কিন্তু নামাজের পর তারা আমাদের অফিসারদের বের করে বিএসএমএমইউ দখলে নিয়ে নেয়। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবে না। এর মধ্যে তারা ফেইসবুকে প্রচার করতে শুরু করলো সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শাহবাগে আসার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তাদের ওপর আমরা অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করি। আমরা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। এখানে সীমিত শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্যের বিষয় বিবেচনা করে প্রথম থেকেই শক্তি প্রয়োগে আমরা বিরত ছিলাম। কিন্তু তাদের তান্ডবে বাধ্য হয়ে আমরা সীমিত শক্তি প্রয়োগ করি।

পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ হবে পুলিশ তা আগে কেন জানতে পারেনি, এটা গোয়েন্দা ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিলাম জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন। সাঈদীর দুই ছেলে প্রথম থেকে আমাদের আশ্বস্ত করেছিল আমাদের বাবার মরদেহ আমরা নিয়ে যাব কোন ধরনের সমস্যা হবে না, আমরা যেভাবে বলবো এখানে সেভাবেই হবে। আমরা তাদের ওপর বিশ্বাস করে প্রথম থেকে কোন প্রকার শক্তি প্রয়োগ করিনি। যেহেতু তারা তাদের নেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য কেউ বা মৃত্যুর সংবাদ শুনে আবার অনেকে মরদেহ দেখার জন্য এসেছেন তাই মানবিক কারণে আমরা প্রথম থেকে কোন ধরনের অ্যাকশনে যাইনি। কিন্তু জামায়াত-শিবির যে তাদের চরিত্রটা পাল্টায়নি তারা আবারও সেটা প্রমাণ করলো।

আজ জামায়াত-শিবির গায়েবানা জানাজা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই জানাজাকে কেন্দ্র করে ডিএমপির কোন প্রস্তুতি আছে কি না আর গোয়েন্দা তথ্য আছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা মঙ্গলবার রাতে যে তান্ডব চালিয়েছে, তারপরে আজ গায়েবানা জানাজা দেয়ার কোন অনুমতি দেয়া হবে না। আমরা এই অনুমতি তাদের দেব না।

সাউন্ড গ্রেনেড আর টিয়ারসেলে আতঙ্ক তৈরি হয় বিএসএমএমইউ হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের :

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হাসপাতালটির ভেতরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

হাসপাতালে রোগীদের স্বজনদের দাবি, পুলিশের টিয়ারগ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে অনেকেরই ঘুম ভেঙে যায়। গ্যাসে ধোঁয়ায় রোগীদেরও শ্বাসকষ্টের অবস্থা তৈরি হয়েছিল। অনবরত বিকট শব্দ শুনে ভয়ে তার হার্ট অ্যাটাকের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

খাইরুল নামের একজন (রোগীর স্বজন) জানান, ঘুমিয়ে গেছিলাম, বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। তারপর জানালা দিয়ে দেখতে গেলাম কী হয়েছে। গিয়ে দেখি টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় সব অন্ধকার। পরে দৌড়ে আবার চলে আসি। একটা পর্যায়ে ধোঁয়া ওয়ার্ডের ভেতরেও চলে আসে। এতে করে রোগী ও স্বজনদেরও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

মাদারীপুর থেকে আসা রোগীর স্বজন নজরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ওয়ার্ডেও ঢুকে গিয়েছিল। বাইরে যখন তারা গ্যাসের কারণে টিকতে পারছিল না, তখন ভেতরে এসে তারা আশ্রয় নিতে থাকে। আমরা যারা রোগী এবং রোগীর স্বজনরা ছিলাম, আমরা চেষ্টা করেছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। রাতে এতটাই ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল যে সে পরিস্থিতিতে আনসার সদস্যরাও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। অনেক রোগী এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজন ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেছিল।

হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মী (আনসার) বলেন, ‘রাতে ডিউটি শেষ করে পাশেই বেতার ভবনে গেলাম বিশ্রাম করতে। কিন্তু বাইরে আন্দোলন, চিৎকার, স্লোগানে আর ভেতরে থাকতে পারছিলাম না। এক পর্যায়ে নিজেই একটু দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু টিয়ারগ্যাস মারার পর সেখান থেকে কোনরকমে চলে এসেছি।’ হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুর হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশসহ নিরাপত্তাবাহিনীর কারণে এতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’ তবে সকালে যখন ৬টার দিকে ডিউটিতে এসেছি, তখন প্রচুর ইটপাটকেল, ভাঙা কাচ হাসপাতালের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. রেজাউর রহমান বলেন, তান্ডবে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে সেটি এখন অনুমান করে বলা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি নিয়ে বসব, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে আপনাদের আমরা জানাবো। অক্সিজেন প্লান্টটা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও কিছু স্থাপনা ভাঙা হয়েছে। কিছু জানালার গ্লাস ভেঙেছে। এর বাইরে হাসপাতালের ভেতরে থাকা একজন জেলা ডিসির গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। এর বাইরে প্রথমে যে অ্যাম্বুলেন্সটাতে লাশ তোলা হয়েছিল, সেটার চাকাসহ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও কিছু ভাঙচুর করা হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া

অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সাঈদীর ভক্ত-সমর্থক জামায়াত নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএসএমএমইউ এলাকায় তান্ডব চালানোর আগেই মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররমে গায়েবানা জানাজা করার দাবি তুলেছিল জামায়াতে ইসলামী। তান্ডব চালানোয় পুলিশ অনুমতি না দিলে দুপুরে তারা মসজিদের বাইরে জড়ো হতে থাকে, তাতে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে সেটি ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নেয়। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। যাচাইবাছাই সাপেক্ষে আটককৃতদের মধ্যে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

মৃত্যু নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যা বলেছে :

এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা যা সম্ভব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সবই করেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. মোস্তফা জামান। সেইসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ে সাঈদীকে যে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তাতে তার পরিবার সন্তুষ্ট বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ডা. মোস্তফা জামান বলেন, সাঈদী সাহেবের সন্তানরা আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসায় তারা সন্তুষ্ট। সাঈদী সাহেব গত রোববার হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান আমাকে রিং পরানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেন। কিন্তু আমরা যখন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করি, তখন দেখি যে তার হার্টে সেই মুহূর্তে রিং পরানো সম্ভব নয়। যে কারণে তাকে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্ট দেয়া হয় এবং ওষুধ দেয়া হয়। পাশাপাশি আমরা করোনারি কেয়ার ইউনিটে তাকে ভর্তি রাখি।

তিনি বলেন, সারাদিন আমরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিয়েছি। বারবার তাকে আমরা দেখেছি এবং কথা বলেছি। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তার আবারও কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। আপনারা জানেন ইতোপূর্বে বিভিন্ন মেয়াদে তার পাঁচটি স্টেন্টিং করা ছিল। এরপর গত সোমবার ৭টা ১০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধপত্র, কার্ডিয়াক মেসেজ, অর্থাৎ লাইভ সাপোর্টের সঙ্গে যা যা করণীয় করেছি।

কার্ডিওলজি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, একজন কার্ডিয়াক রোগীকে আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী যেসব চিকিৎসা দেয়া হয়, আমরা সাঈদী সাহেবকে সে ধরনের চিকিৎসা দিয়েছি। তারপরও আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করি। তার সন্তানদের অনুমতি নিয়ে তার হার্টের টিউবগুলো রিমুভ করা হয়। এ সময় আমরা তার দুই সন্তানকে সব ধরনের প্রসিডিউর ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের করণীয় কী, তাদের করণীয় কী সবকিছুই বুঝিয়ে বলেছি।

ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছি। আমাদের এখানে সাঈদী এসেছিলেন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে, আমরা তাদের কাছেই ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছি।

চকরিয়ায় সংর্ঘষ, গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা পড়াকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সদরে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত নেতাকর্মীদের সংর্ঘষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ফোরকানুর রহমান (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহত ফোরকান চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছাবেদপাড়া এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। তিনি জামায়াতের কর্মী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

সংর্ঘষের সময় ইট-পাটকেলের আঘাতে চকরিয়া থানা পুলিশের একটি পিকআপ ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালের টিএইচও’র সরকারি গাড়িসহ মোট পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাকালে হামলায় চকরিয়া থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া সংর্ঘষে ১০-১২ জন জামাত-শিবিরের নেতাকর্মী কমবেশি আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে চকরিয়া পৌরসদরের বায়তুশরফ সড়কে ঘটেছে এ ঘটনা। এ ঘটনার পর থেকে চকরিয়া উপজেলা সদর ছাড়াও আশপাশ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

চকরিয়া থানা পুলিশ জানান, মঙ্গলবার বিকেলে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে উপজেলা সদরের পৌর বাসটার্মিনাল ও চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা পড়তে চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদেরকে অন্য এলাকায় সরে যেতে অনুরোধ করে। পরে অবশ্য জামায়াতের নেতাকর্মীরা চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গা জামে মসজিদ মাঠে জানাযার নামাজ শেষ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে গায়েবানা জানাযা শেষ করার পর পুনরায় আরেকটি জামাত করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ সময় একপর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে হামলা চালায়। এতে পুলিশের একটি পিকআপ গাড়ি, পাশে থাকা চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালের টিএইচও ডা. শোভন দত্তের সরকারি গাড়িসহ আশপাশের পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের নেতাকর্মীর সংর্ঘষের সময় মুখোশধারী লোকজন এসে সংর্ঘষে জড়ালে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ফোরকানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি নিহত ও পাঁচ পুলিশসহ অন্তত ২০-২২ জন কমবেশি আহত হয়েছেন।

চকরিয়া থানা পুলিশ জানান, ঘটনার সময় জামায়াত নেতাকর্মী ও গায়েবানা জানাযা পড়তে আসা লোকজনের ইট-পাটকেলের আঘাতে চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ, থানার অপারেশন অফিসার এসআই রাজীব চন্দ্র সরকার, এসআই মামুনুর রশীদ, পুলিশ কনস্টেবল আবদুর রউফ ও সাগর গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তাদেরকে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ছৈয়দ ইফতেখারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এক ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধসহ ৭ জন আহত চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে আনার আগে মারা গেছেন ফোরকানুর রহমান। দেখে মনে হচ্ছে, তার মাথার পেছনে ছড়রা গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। চকরিয়া থানা ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি নিজেসহ পুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছেন। গায়েবানা জানাযা ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, চকরিয়ায় জানাযা নিয়ে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। তবে গুলিবর্ষণ পুলিশের পক্ষে করা হয়নি। এতে হতাহত কত জন বিস্তারিত পরে জানানো হবে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, নিষেধ করা সত্ত্বেও স্থান পরিবর্তন করে গায়েবানা জানাজা পড়ে। পরে মিছিল নিয়ে পৌরশহরের সহাসড়কে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশ, হাসপাতালের টিএইচও এবং পাবলিকের গাড়ি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। একজনের মৃত্যুর বিষয়ে ইউএনও বলেন, হয়তো নিজেদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে হতাহত হতে পারে। তা তদন্ত করে দেখা হবে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চকরিয়া পৌরশহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ সময় ইউএনও জেপি দেওয়ান, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব-উর-রাজার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।

চট্টগ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকজন জামায়াতের নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে গত সোমবার সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চট্টগ্রাম জেলা ও নগর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। রাতেই জেলা ও বন্দরনগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ সদস্যদের নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে।

এদিকে মঙ্গলবার নগরীতে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন জামায়াতের নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার নগরীর কাজির দেউড়ি মোড় এলাকায় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওয়াসা মোড় এলাকায় ফের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওয়াসার মোড়ে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এতে পুলিশ ধাওয়া দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে জামায়াত-শিবিরের অন্তত ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর ওয়াসা মোড় এলাকায় জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে সাইদীর গায়েবানা জানাজা নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাক্বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এরপর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, তারা সহিংসতার জন্য জড়ো হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে জামায়াত শিবিরের বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাছাই বাছাইয়ের কাজ চলছে।

 

 

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোনরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়া জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এখানে জড়ো হতে থাকে। পরে তারা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটা প্রতিরোধ করেছি। পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএসএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় ও সীতাকুন্ড এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমাদের ছয় থেকে সাতটি মোবাইল টিম কাজ করছে। সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় জামায়াত-শিবিরের পূর্বে সহিংসতার রেকর্ড আছে, সেসব এলাকায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি।

জনপ্রিয় সংবাদ

গলাচিপায় মিথ্যে ধর্ষণ চেষ্টা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন 

সাঈদীর মৃত্যুতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবির সংঘর্ষ

আপডেট সময় : ১২:৩১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তান্ডব চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মিন্টু রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। যদিও রাতভর অবরোধ থাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে সাঈদীর সমর্থকদের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল, এবং ফাঁকা গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করতে হয়েছে। পরে পুলিশি পাহাড়ায় সাঈদীর মরদেহ পাঠানো হয় পিরোজপুরে। এদিকে চকরিয়ায় গায়েবানা জানাজা ঘিরে সংঘর্ষ, গুলিতে এক জন নিহত।

গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহুূর্তে সাঈদী সমর্থক ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা হাসপাতালের সামনে জড়ো হতে থাকে। এ সময় তারা সাঈদীকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। রাত যত গভীর হতে থাকে ততোই শাহবাগে জামায়াত নেতাকর্মীদের ভীড় বাড়তে থাকে। কয়েক দফা চেষ্টা করেও পুলিশ সাঈদী সমর্থকদের হাসপাতালের সামনে থেকে সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। ভোর পর্যন্ত জামায়াত-শিবির কর্মীসহ সাঈদী সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিলের কারণে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল ও আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়। রাতভর এসব কারণে সাঈদীর লাশ হাসপাতাল থেকে বের করা যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে ভোরে সাঈদীর লাশ শীতাতক নিয়ন্ত্রিত এম্বুলেন্সে বের করা হলে শাহাবাগ মোড়ে সাঈদীর মরদেহ রেখে জানাজার নামাজের আয়োজন করার চেষ্টা করে জামায়াত-শিবির ও সাঈদীর সমর্থকরা। ওই সময় সাঈদীর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল ও এম্বুলেন্সে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ারসেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

সাঈদীর মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হার্ট অ্যাটাকজনিত কারণে মারা যান। সারারাত তার মরদেহ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও তার স্বজনরা নাটক করেছে এবং তান্ডব চালিয়েছে।

তিনি মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তার দুই ছেলেকে জানায়। পরে তার দুই ছেলে মরদেহ পিরোজপুর নেয়ার জন্য কারাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। এর মধ্যে জেল কর্তৃপক্ষ মরদেহের ময়নাতদন্ত করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। সেই অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে আসা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট এসে মরদেহের সুরতহাল সম্পন্ন করেন। যখন ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হবে সেই মুহূর্তে তার ছেলেরা জোর দাবি জানায়, তারা ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নিতে চায়। এ বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। পরে রাত একটা কি দেড়টার দিকে তারা জেল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায় বলেন ডিএমপি কমিশনার।

কমিশনারের ভাষ্য, এরপর মরদেহের গোসল শেষে পরিবার প্রস্তুতি নেয় পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়ার। তখন বিএসএমএমইউ ও শাহবাগে আগে থেকে অবস্থান নেয়া কয়েক হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী দাবি তুলে জানাজা পড়ে মরদেহ নেয়ার। তখন আমরা তাদের বলি আপনারা এখানে জানাজা পড়তে পারেন। আমরা তাদের বলি জাতীয় শোক দিবস আমাদের ব্যস্ততা আছে, আপনারা এখন জানাজা পড়ে মরদেহ নিয়ে যেতে পারেন। রাত সোয়া ২টার দিকে তারা জানাজার পরিবর্তে মোনাজাত করে আধা ঘণ্টা। তারা বলে আমরা জানাজা পড়ব না মোনাজাত করেছি, পরে আমরা গায়েবানা জানাজা পড়ব। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা মোনাজাত করে।

 

 

কিন্তু যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে। তারা কোনভাবে মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এ সময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় তারা গাড়ি ভাঙচুরও শুরু করে। এই হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হয়। তারা পুলিশের ৪-৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা ধৈর্য সহকারে এই তান্ডব সহ্য করি যে, তারা একটা মরদেহ নিয়ে যেতে চাইছে সেটা নিয়ে যাক। তারপরেও আমরা কোন শক্তি প্রয়োগ করিনি।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ফজরের নামাজের পরে তাদের আবারও অনুমতি দেয়া হলো জানাজা পড়ার। কিন্তু নামাজের পর তারা আমাদের অফিসারদের বের করে বিএসএমএমইউ দখলে নিয়ে নেয়। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবে না। এর মধ্যে তারা ফেইসবুকে প্রচার করতে শুরু করলো সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শাহবাগে আসার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তাদের ওপর আমরা অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করি। আমরা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। এখানে সীমিত শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্যের বিষয় বিবেচনা করে প্রথম থেকেই শক্তি প্রয়োগে আমরা বিরত ছিলাম। কিন্তু তাদের তান্ডবে বাধ্য হয়ে আমরা সীমিত শক্তি প্রয়োগ করি।

পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ হবে পুলিশ তা আগে কেন জানতে পারেনি, এটা গোয়েন্দা ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিলাম জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন। সাঈদীর দুই ছেলে প্রথম থেকে আমাদের আশ্বস্ত করেছিল আমাদের বাবার মরদেহ আমরা নিয়ে যাব কোন ধরনের সমস্যা হবে না, আমরা যেভাবে বলবো এখানে সেভাবেই হবে। আমরা তাদের ওপর বিশ্বাস করে প্রথম থেকে কোন প্রকার শক্তি প্রয়োগ করিনি। যেহেতু তারা তাদের নেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য কেউ বা মৃত্যুর সংবাদ শুনে আবার অনেকে মরদেহ দেখার জন্য এসেছেন তাই মানবিক কারণে আমরা প্রথম থেকে কোন ধরনের অ্যাকশনে যাইনি। কিন্তু জামায়াত-শিবির যে তাদের চরিত্রটা পাল্টায়নি তারা আবারও সেটা প্রমাণ করলো।

আজ জামায়াত-শিবির গায়েবানা জানাজা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই জানাজাকে কেন্দ্র করে ডিএমপির কোন প্রস্তুতি আছে কি না আর গোয়েন্দা তথ্য আছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা মঙ্গলবার রাতে যে তান্ডব চালিয়েছে, তারপরে আজ গায়েবানা জানাজা দেয়ার কোন অনুমতি দেয়া হবে না। আমরা এই অনুমতি তাদের দেব না।

সাউন্ড গ্রেনেড আর টিয়ারসেলে আতঙ্ক তৈরি হয় বিএসএমএমইউ হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের :

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হাসপাতালটির ভেতরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

হাসপাতালে রোগীদের স্বজনদের দাবি, পুলিশের টিয়ারগ্যাস আর সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে অনেকেরই ঘুম ভেঙে যায়। গ্যাসে ধোঁয়ায় রোগীদেরও শ্বাসকষ্টের অবস্থা তৈরি হয়েছিল। অনবরত বিকট শব্দ শুনে ভয়ে তার হার্ট অ্যাটাকের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

খাইরুল নামের একজন (রোগীর স্বজন) জানান, ঘুমিয়ে গেছিলাম, বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। তারপর জানালা দিয়ে দেখতে গেলাম কী হয়েছে। গিয়ে দেখি টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় সব অন্ধকার। পরে দৌড়ে আবার চলে আসি। একটা পর্যায়ে ধোঁয়া ওয়ার্ডের ভেতরেও চলে আসে। এতে করে রোগী ও স্বজনদেরও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

মাদারীপুর থেকে আসা রোগীর স্বজন নজরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ওয়ার্ডেও ঢুকে গিয়েছিল। বাইরে যখন তারা গ্যাসের কারণে টিকতে পারছিল না, তখন ভেতরে এসে তারা আশ্রয় নিতে থাকে। আমরা যারা রোগী এবং রোগীর স্বজনরা ছিলাম, আমরা চেষ্টা করেছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। রাতে এতটাই ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল যে সে পরিস্থিতিতে আনসার সদস্যরাও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। অনেক রোগী এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজন ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেছিল।

হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মী (আনসার) বলেন, ‘রাতে ডিউটি শেষ করে পাশেই বেতার ভবনে গেলাম বিশ্রাম করতে। কিন্তু বাইরে আন্দোলন, চিৎকার, স্লোগানে আর ভেতরে থাকতে পারছিলাম না। এক পর্যায়ে নিজেই একটু দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু টিয়ারগ্যাস মারার পর সেখান থেকে কোনরকমে চলে এসেছি।’ হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুর হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশসহ নিরাপত্তাবাহিনীর কারণে এতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’ তবে সকালে যখন ৬টার দিকে ডিউটিতে এসেছি, তখন প্রচুর ইটপাটকেল, ভাঙা কাচ হাসপাতালের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. রেজাউর রহমান বলেন, তান্ডবে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে সেটি এখন অনুমান করে বলা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি নিয়ে বসব, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে আপনাদের আমরা জানাবো। অক্সিজেন প্লান্টটা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও কিছু স্থাপনা ভাঙা হয়েছে। কিছু জানালার গ্লাস ভেঙেছে। এর বাইরে হাসপাতালের ভেতরে থাকা একজন জেলা ডিসির গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। এর বাইরে প্রথমে যে অ্যাম্বুলেন্সটাতে লাশ তোলা হয়েছিল, সেটার চাকাসহ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও কিছু ভাঙচুর করা হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া

অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সাঈদীর ভক্ত-সমর্থক জামায়াত নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএসএমএমইউ এলাকায় তান্ডব চালানোর আগেই মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররমে গায়েবানা জানাজা করার দাবি তুলেছিল জামায়াতে ইসলামী। তান্ডব চালানোয় পুলিশ অনুমতি না দিলে দুপুরে তারা মসজিদের বাইরে জড়ো হতে থাকে, তাতে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে সেটি ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নেয়। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। যাচাইবাছাই সাপেক্ষে আটককৃতদের মধ্যে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

মৃত্যু নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যা বলেছে :

এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা যা সম্ভব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সবই করেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. মোস্তফা জামান। সেইসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ে সাঈদীকে যে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তাতে তার পরিবার সন্তুষ্ট বলেও দাবি করেছেন তিনি।

ডা. মোস্তফা জামান বলেন, সাঈদী সাহেবের সন্তানরা আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসায় তারা সন্তুষ্ট। সাঈদী সাহেব গত রোববার হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান আমাকে রিং পরানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেন। কিন্তু আমরা যখন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করি, তখন দেখি যে তার হার্টে সেই মুহূর্তে রিং পরানো সম্ভব নয়। যে কারণে তাকে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্ট দেয়া হয় এবং ওষুধ দেয়া হয়। পাশাপাশি আমরা করোনারি কেয়ার ইউনিটে তাকে ভর্তি রাখি।

তিনি বলেন, সারাদিন আমরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিয়েছি। বারবার তাকে আমরা দেখেছি এবং কথা বলেছি। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তার আবারও কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। আপনারা জানেন ইতোপূর্বে বিভিন্ন মেয়াদে তার পাঁচটি স্টেন্টিং করা ছিল। এরপর গত সোমবার ৭টা ১০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধপত্র, কার্ডিয়াক মেসেজ, অর্থাৎ লাইভ সাপোর্টের সঙ্গে যা যা করণীয় করেছি।

কার্ডিওলজি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, একজন কার্ডিয়াক রোগীকে আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী যেসব চিকিৎসা দেয়া হয়, আমরা সাঈদী সাহেবকে সে ধরনের চিকিৎসা দিয়েছি। তারপরও আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করি। তার সন্তানদের অনুমতি নিয়ে তার হার্টের টিউবগুলো রিমুভ করা হয়। এ সময় আমরা তার দুই সন্তানকে সব ধরনের প্রসিডিউর ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের করণীয় কী, তাদের করণীয় কী সবকিছুই বুঝিয়ে বলেছি।

ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছি। আমাদের এখানে সাঈদী এসেছিলেন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে, আমরা তাদের কাছেই ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছি।

চকরিয়ায় সংর্ঘষ, গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা পড়াকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সদরে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত নেতাকর্মীদের সংর্ঘষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ফোরকানুর রহমান (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহত ফোরকান চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছাবেদপাড়া এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। তিনি জামায়াতের কর্মী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

সংর্ঘষের সময় ইট-পাটকেলের আঘাতে চকরিয়া থানা পুলিশের একটি পিকআপ ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালের টিএইচও’র সরকারি গাড়িসহ মোট পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাকালে হামলায় চকরিয়া থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া সংর্ঘষে ১০-১২ জন জামাত-শিবিরের নেতাকর্মী কমবেশি আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে চকরিয়া পৌরসদরের বায়তুশরফ সড়কে ঘটেছে এ ঘটনা। এ ঘটনার পর থেকে চকরিয়া উপজেলা সদর ছাড়াও আশপাশ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

চকরিয়া থানা পুলিশ জানান, মঙ্গলবার বিকেলে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে উপজেলা সদরের পৌর বাসটার্মিনাল ও চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা পড়তে চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদেরকে অন্য এলাকায় সরে যেতে অনুরোধ করে। পরে অবশ্য জামায়াতের নেতাকর্মীরা চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গা জামে মসজিদ মাঠে জানাযার নামাজ শেষ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে গায়েবানা জানাযা শেষ করার পর পুনরায় আরেকটি জামাত করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ সময় একপর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে হামলা চালায়। এতে পুলিশের একটি পিকআপ গাড়ি, পাশে থাকা চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালের টিএইচও ডা. শোভন দত্তের সরকারি গাড়িসহ আশপাশের পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের নেতাকর্মীর সংর্ঘষের সময় মুখোশধারী লোকজন এসে সংর্ঘষে জড়ালে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ফোরকানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি নিহত ও পাঁচ পুলিশসহ অন্তত ২০-২২ জন কমবেশি আহত হয়েছেন।

চকরিয়া থানা পুলিশ জানান, ঘটনার সময় জামায়াত নেতাকর্মী ও গায়েবানা জানাযা পড়তে আসা লোকজনের ইট-পাটকেলের আঘাতে চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ, থানার অপারেশন অফিসার এসআই রাজীব চন্দ্র সরকার, এসআই মামুনুর রশীদ, পুলিশ কনস্টেবল আবদুর রউফ ও সাগর গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তাদেরকে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ছৈয়দ ইফতেখারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এক ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধসহ ৭ জন আহত চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে আনার আগে মারা গেছেন ফোরকানুর রহমান। দেখে মনে হচ্ছে, তার মাথার পেছনে ছড়রা গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। চকরিয়া থানা ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি নিজেসহ পুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছেন। গায়েবানা জানাযা ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, চকরিয়ায় জানাযা নিয়ে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। তবে গুলিবর্ষণ পুলিশের পক্ষে করা হয়নি। এতে হতাহত কত জন বিস্তারিত পরে জানানো হবে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, নিষেধ করা সত্ত্বেও স্থান পরিবর্তন করে গায়েবানা জানাজা পড়ে। পরে মিছিল নিয়ে পৌরশহরের সহাসড়কে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশ, হাসপাতালের টিএইচও এবং পাবলিকের গাড়ি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। একজনের মৃত্যুর বিষয়ে ইউএনও বলেন, হয়তো নিজেদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে হতাহত হতে পারে। তা তদন্ত করে দেখা হবে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চকরিয়া পৌরশহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ সময় ইউএনও জেপি দেওয়ান, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব-উর-রাজার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।

চট্টগ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকজন জামায়াতের নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে গত সোমবার সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চট্টগ্রাম জেলা ও নগর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। রাতেই জেলা ও বন্দরনগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ সদস্যদের নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে।

এদিকে মঙ্গলবার নগরীতে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন জামায়াতের নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার নগরীর কাজির দেউড়ি মোড় এলাকায় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওয়াসা মোড় এলাকায় ফের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওয়াসার মোড়ে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এতে পুলিশ ধাওয়া দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে জামায়াত-শিবিরের অন্তত ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর ওয়াসা মোড় এলাকায় জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে সাইদীর গায়েবানা জানাজা নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাক্বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এরপর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, তারা সহিংসতার জন্য জড়ো হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে জামায়াত শিবিরের বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাছাই বাছাইয়ের কাজ চলছে।

 

 

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোনরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়া জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এখানে জড়ো হতে থাকে। পরে তারা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটা প্রতিরোধ করেছি। পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএসএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় ও সীতাকুন্ড এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমাদের ছয় থেকে সাতটি মোবাইল টিম কাজ করছে। সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় জামায়াত-শিবিরের পূর্বে সহিংসতার রেকর্ড আছে, সেসব এলাকায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি।